টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার থেকে আবার খুলেছে ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজার। তবে সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজার তিন ক্ষেত্রেই লেনদেন হবে সীমিত পরিসরে।
মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
এ বিধিনিষেধের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে গত বুধবার (৩০ জুন) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।
এর প্রেক্ষিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারের সঙ্গে রোববার ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ রেখে সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার দিন ব্যাংক খোলার নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা কমিয়ে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত করা হয়।
সরকারের বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংক খোলার এই নির্দেশনা আসলেও ব্যাংক হলিডের কারণে বৃহস্পতিবার ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ ছিল। এতে টানা চারদিন বন্ধ থাকে ব্যাংক।
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক খোলার নির্দেশনা দেয়ার পরপরই পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শেয়ারবাজারে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।
ব্যাংকের লেনদেনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সপ্তাহের চারদিন (সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার) শেয়ারবাজারের কার্যদিবস নির্ধারণ করা হয়। আর লেনদেনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।
শেয়ারবাজারে লেনদেন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কোনো বিনিয়োগকারী সশরীরে কোনো প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধুমাত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন চালু থাকবে।
শেয়ারবাজারের লেনদেন চালু রাখায় কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চলাচলের জন্য বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত পাসে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জরুরি আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে (পুলিশ মহাপরিদর্শকের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে) এই আদেশ বাহককে অবাধ চলাচলের সুযোগ প্রদানের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপকালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, যা ৫ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
স্বাস্থ্যসেবায় মেশিন লার্নিংয়ের গুরুত্ব
প্রতিটি শিল্পে এখন ডিজিটালাইজেশন বা ডিজিটাল রূপান্তরের প্রভাব পড়ছে। ফলে ডেটা সংগ্রহ ও সরবরাহ করার সক্ষমতা অর্জন করাটা এখন সব শিল্পের জন্যেই জরুরি হয়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্যসেবা খাতেও বিপুল পরিমাণ ডেটা নিয়ে কাজ করার ফলে যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে, সেসব মোকাবিলায় মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহায়ক হতে পারে।
চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো, অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি উন্নত করা এবং চিকিৎসা ব্যয় কমাতেও সহায়ক হতে পারে মেশিন লার্নিং।
এছাড়া মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির সাহায্যে নির্ভুলভাবে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রোগীদের রোগ শনাক্তকরণ সম্ভব। চিকিৎসার সময় ডাক্তারদের জন্যেও সহায়ক হবে এ প্রযুক্তি।
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে প্রচলিত ধরনগুলির একটি মেশিন লার্নিং। এ প্রযুক্তির সাহায্যে বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেস করার মাধ্যমে প্যাটার্ন খুঁজে বের করে তা থেকে জটিল সব বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
মেশিন লার্নিংয়ে ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলোয় অ্যালগরিদম থাকে। যথাযথভাবে নির্দিষ্ট কোনো কাজ সম্পন্ন করার জন্যে নির্দেশাবলী বা ইন্সট্রাকশনের সমষ্টিকে বলা হয় অ্যালগরিদম। মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে ডেটা থেকে শেখা বা লার্নিংয়ের জন্যেই এসব অ্যালগোরিদম ডিজাইন করা হয়ে থাকে।
কয়েক ধরণের মেশিন লার্নিং রয়েছে। যেমন সুপারভাইজড লার্নিং, আনসুপারভাইজড লার্নিং ও রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং।
মেশিন লার্নিং প্রয়োগ করে অ্যালগরিদমের নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিকিৎসার প্রোটোকলসহ বিভিন্ন বিষয় আরও নির্ভুলভাবে করা যেতে পারে। যেমন ডিপ লার্নিংয়ের কথা বলা যায়। এটি এমন এক ধরনের জটিল মেশিন লার্নিং, যা মানব মস্তিষ্কের কার্যক্রম অনুকরণ করে।
বর্তমানে রেডিওলজি ও মেডিকেল ইমেজিংয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে কোনো ধরনের তদারকি বা সুপারভাইজেশন ছাড়াই ডেটা থেকে শিখতে সক্ষম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডিপ লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন ছবি থেকে ক্যান্সারজনিত ক্ষত শনাক্ত এবং বিশ্লেষণ করতে পারে।
দ্রুতগতিতে প্রসেসিং ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের অবকাঠামো উন্নত হওয়ায় মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এখন মানুষের চোখে যা ধরা পড়ে, তার চেয়ে বেশি অসঙ্গতি শনাক্ত করা যাচ্ছে। এর ফলে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাক্ষেত্রের অনেক কাজই নির্ভুলভাবে সহজে করা সম্ভব হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবায় মেশিন লার্নিংয়ের যে অগ্রগতি হচ্ছে, তার ফলে পুরো স্বাস্থ্যসেবা শিল্পই বদলে যাচ্ছে। সম্প্রতি নতুন যেসব মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এবং মেডিকেল রেকর্ড ও চিত্রের ওপর ভিত্তি করে স্তন ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তি নির্ধারণের জন্যে প্রেডিক্টিভ বিশ্লেষণ তুলে ধরার একটি ডায়গনিস্টিক টুল।
মূলত স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের ৩টি ক্ষেত্রে মেশিন লার্নিং-এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। যেমন রেকর্ডকিপিং। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে তথ্য বা ডেটার ব্যবস্থাপনায় মেশিন লার্নিং ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড বা EHR সহ রেকর্ডকিপিং-এর বিভিন্ন কাজ করতে পারে। EHR ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করলে রোগীর সেবাযত্নের মান উন্নত হতে পারে, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রশাসনিক ব্যয় কমতে পারে এবং অস্ত্রোপচার আরো কার্যকরভাবে করা সম্ভব হতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত তথ্যে কোনো ফাঁক থাকলে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি ভুল পূর্বাভাস তৈরি করতে পারে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে।
তবে যেহেতু স্বাস্থ্যসেবায় ডেটা বা তথ্য মূলত EHR-এর জন্যেই সংরক্ষণ করা হবে, তাই মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমগুলি যাতে তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য আগেই ডেটা প্রস্তুত করে রাখতে হবে।
Discussion about this post