দেশের বিমা খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল ও অটোমেশনে আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটা যদি ডিজিটাল হয়, প্রিমিয়াম দেয়ার ব্যাপারে বা কোনো ব্যাপারে সরাসরি যদি কাজ করা যায়, বা অনলাইনে করা যায়, তা সবার জন্য সুবিধা হবে, সবাই আগ্রহী হবে।’
গতকাল ‘জাতীয় বিমা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো আমাদের দেশটা আমরা ডিজিটাল করে ফেলেছি। সবকিছু এখন ডিজিটালি হয়। কেনা-বেচা হয়, সবকিছু হয়। আর ডিজিটাল করেছিলাম বলেই করোনাকালে আমাদের অর্থনীতির চাকা যেমন সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের জীবনজীবিকাও সচল থেকেছে।’
গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে ইউনিফাইড ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম (ইউএমপি) চালু করা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে। গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা দিতে হবে। মানুষকে বিমার বিষয়ে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। এটাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বিমা সেবা যদি মানুষ হাতের কাছে পায়, তাহলে অনেকে তার জীবন নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্তত আমি এইটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা কিন্তু বেসরকারি খাতে অনেক বিমা কোম্পানি দিয়েছি। তাতে যেমন অনেকের ব্যবসা করারও সুযোগ হয়েছে, বিমা ব্যবসায় যেমন সবাই সম্পৃক্ত হয়েছে, পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি যেটাই করি, আমার মাথায় সব সময় এটাই থাকে যে আমি কী করে আরও বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। এজন্য আমি যখনই সরকারে এসেছি, প্রথমবার ১৯৯৬ সালে, তখন থেকে এই পর্যন্ত আমরা সব প্রতিষ্ঠান বেসরকারি খাতে উম্মুক্ত করে দিয়েছি। এই উম্মুক্ত করে দেয়ার একটাই উদ্দেশ্য, সে উদ্দেশ্যটা হলো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমা মানে হলো আমানত। আমি একটা আমানত রাখছি। সেই আমানত যেন যথাযথভাবে সময়মতো মানুষ পেতে পারে। আবার এটা পেতে গিয়ে যেন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে না হয়। তার জন্য যেটা গ্রাহকের প্রাপ্য সে যেন সহজে সেটা পেতে পারে, সে ব্যবস্থাটাও করতে হবে। হ্যাঁ পাশাপাশি কেউ যেন দুই নম্বরি করতে না পারে, সেটাও অবশ্যই দেখতে হবে। কিন্তু তার টাকাটা যেন সে পায়, কোনো হয়রানি যেন না হয়।’
আওয়ামী লীগ সরকারের আসার পর বেসরকারি খাতে অনেক বিমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাতে যেমন অনেকের ব্যবসা করার সুযোগ হয়েছে, সেই বিমা ব্যবসায় যেমন মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে।’
বিমা-সংশ্লিষ্টদের দুটি বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটা হলো মানুষের অনীহা। ওই যে টাকা দিতে হবে, সে দিতে চায় না, সেখানে একটা ফাঁকি দেয়া। আরেকটা হচ্ছে এই যে মিথ্যা-মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়ে সেখান থেকে টাকা নেয়া। এই দুটা বিষয়ে আমি মনে করি খুব বেশি নজর দেয়া দরকার। আর যারা দুই নম্বরি করে টাকা নিতে চায়, সেগুলোও ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এ বিষয়ে আমি মনে করি আপনারা আরও বেশি সতর্ক থাকবেন।’
যারা নাটক সাজিয়ে বিমার টাকা নিতে চায়, তাদের বিষয়ে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ছোটবেলা থেকে দেখেছি। একটা ঘটনা বলি, পাটের গুদামে হঠাৎ আগুন লেগে যেত, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সব পাট নাকি পুড়ে যেত। তখন বিমা থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা নিত। তো একবার এটা খোঁজ করে দেখা গেল, আসলে পাটের মালিক পাট বিক্রি করে আগুন লাগিয়ে দিত। এরপর একটা বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করে বসত। একই ঘটনা আমি পেয়েছি গার্মেন্ট সেক্টরেও। আমার সন্দেহ হলো, আমি নাম বলে কাউকে বিব্রত করব না। কিন্তু এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তারপর নজরদারি শুরু করলাম। ঠিক দেখা গেল যে ঘটনা তা-ই। … সেটা আমি এক পর্যায়ে আটকালাম। ভালোভাবে তথ্য নিলাম। তো এই ধরনের ঘটনাও কিন্তু ঘটে।’
‘থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স’ বন্ধ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বন্ধই করে দিতে হবে। এটা একেবারে ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছু নয়।’
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে দেশের মানুষের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দে এ অনুষ্ঠানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
Discussion about this post